কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ কুড়িগ্রাম বাংলাদেশের একটি সরকারি কলেজ। এই কলেজটি কুড়িগ্রাম কলেজ নামে পরিচিত। আধুনিক সুযোগ সুবিধা সহ শ্রেণীকক্ষ, গবেষণাগার, গ্রন্থাগার এবং সাধারণ কক্ষ রয়েছে। কলেজ রাজনৈতিক অস্থিরতা থেকে মুক্ত ফলে কলেজটি উপজেলার অন্যতম কলেজের স্বীকৃতি পেয়েছে।
দারিদ্রপীড়িত পশ্চাৎপদ ১৬টি নদ-নদী দ্বারা পরিবেষ্টিত কুড়িগ্রাম জেলার উচ্চ শিক্ষায় অবদান রাখছে প্রাচীন বিদ্যাপীঠ কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ। ১৯৬১ সালে স্থাপিত এ কলেজে নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে অনার্স ও মাস্টার্স কোর্স চালু হলেও নানামুখী সংকট এবং সমস্যায় সুষ্ঠু শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে।
ইতিহাস
বিস্তৃত সবুজ মাঠের উত্তর দিকে রয়েছে প্রাচীন অশ্বত্থবৃক্ষ। কত কালের কত সুখ-দুঃখের নীরব সাক্ষী এ মহীরুহ। প্রধান ভবন ছাড়া ও রয়েছে একাডেমিক ভবন, ব্যবসায় শিক্ষা ভবন, একাডেমিক কাম পরীক্ষা হল, ছাত্রীনিবাস, ছাত্রাবাস, মসজিদ, ছাত্রদের সাইকেল গ্যারেজ। একাডেমিক ভবনের পাশেই রয়েছে মহান ভাষা আন্দোলনের গৌরবময় ইতিহাসের অনন্য স্মারক "একুশেমঞ্চ"। এই অসাধারণ ঐতিহাসিক স্থাপনটি নির্মাণের প্রধান উদ্যোক্তা ও রূপকার কলেজের সম্মানিত প্রাক্তন অধ্যক্ষ প্রফেসর মোঃ আবুল কাশেম সরকার। তার ইতিহাসবোধ ও প্রগতিশীল চেতনা ছাড়া এরকমের একটি শহীদ মিনার তৈরি প্রায় অসম্ভব ছিল। প্রায় পাঁচ লক্ষ টাকা ব্যয়ে জাতীয় শহীদ মিনারের আদলে এ শহীদ মিনারটি উত্তরাঞ্চল তথা দেশের অন্যতম বৃহৎ শহীদ মিনার। ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত বাংলাদেশের রক্তাক্ত সংগ্রামের অবিনাশী উত্তরাধিকারে দীপ্ত এ শিক্ষায়তন। এ কলেজেরই কৃতী পুরুষ ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক মোঃ আব্দুল ওয়াহাব একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হন। বর্তমান ছাত্রাবাসটি তার নামেই করা হয়েছে। ষাটের দশকে ক্রীড়া ক্ষেত্রে এ কলেজের ছিল সুনাম ও খ্যাতি। ১৯৬৪ সাল থেকে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত স্কুলের প্রাক্তন বিশিষ্ট শিক্ষক ক্রীড়াবিদ জনাব বিশ্বনাথ রুদ্র। এর মধ্যে ১৯৬৪ সালে উলিপুরের জনাব আমজাদ হোসেন তালুকদারের সঙ্গে (পরবর্তীতে জাতীয় সংসদ সদস্য, উলিপুর) তিনি যুগ্ন চ্যাম্পিয়ন হন। কলেজের অধ্যক্ষ এবং পরবর্তীতে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের সচিব প্রফেসর মোঃ মোখলেসুর রহমানের চেষ্টা ও আন্তরিকতায় ১৯৯৭ সালে ৫টি বিষয়ে অনার্স কোর্স চালুর মধ্য দিয়ে এ কলেজের নবতর যাত্রা শুরু হয়। পরবর্তী বছর আরো ৭টি বিষয়ে অনার্স কোর্স খোলার অনুমোদন দেয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। উল্লেখ্য অনার্স প্রবর্তনের ক্ষেত্রে এসময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন কলেজের প্রাক্তন ছাত্র ও সাধারণ সম্পাদক বিশিষ্ট রাজনীতিক মোঃ জাফর আলী (জাতীয় সংসদ সদস্য)। এ সময় কমিটির সার্বিক কার্যক্রমের সমন্বয়ক ছিলেন উপাধ্যক্ষ জনাব মোঃ আব্দুল আলী। কুড়িগ্রামের বিশিষ্ট রাজনীতিক মোঃ জাফর আলী সংসদ সদস্য থাকাকালিন সময়েই ২০১১ সালে (শিক্ষাবর্ষঃ ২০০৮-২০০৯) ৬টি বিষয়ে মাষ্টার্স কোর্স চালু হয়। এ ছাড়াও তার সময়েই ২০১২ সালে আরো দুইটি বিষয়ে মাষ্টার্স কোর্স চালু হয়। এ সময় সার্বিক কার্যক্রমের সমন্বয়ক ছিলেন কলেজের সুযোগ্য অধ্যক্ষ প্রফেসর সাবিহা খাতুন। তাকে সর্বাত্নক সহযোগিতা করেন উপাধ্যক্ষ জনাব মোঃ তোফায়েল হোসেন। প্রাক্তন অধ্যক্ষ প্রফেসর মোঃ আবুল কাশেম সরকারের নিরন্তর চেষ্টার ফলে ২০০৬-২০০৭ শিক্ষা বর্ষে রসায়ন ও পদার্থ বিজ্ঞান বিষয়ে অনার্স কোর্স শুরু হয়। শুধু তাই নয়, একুশেমঞ্চের মত গুরুত্বপূর্ণ শহীদ মিনার নির্মাণ, কলেজের সীমানা প্রাচীর তৈরি আভ্যন্তরিণ সড়কনির্মাণ, সাইকেল গ্যারেজ নির্মাণ প্রভৃতি প্রাক্তন অধ্যক্ষ প্রফেসর মোঃ আবুল কাশেম সরকার এর কর্মস্পৃহা ও প্রশাসনিক দক্ষতার পরিচয়। কলেজের দৃষ্টি নন্দন শৈল্পিক মনোগ্রামটি বিনা পারিশ্রমিকে করে দিয়েছেন অত্র কলেজের প্রাক্তন ছাত্র জনাব আব্দুল লতিফ। তিনি বর্তমানে রংপুর ক্যাডেট কলেজের ফাইন আর্টস বিভাগে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত। অনার্সের প্রতিটি বিভাগে রয়েছে নিজস্ব সেমিনার ও গ্রন্থাগার। গণিত বিভাগে নিজস্ব কম্পিউটার ল্যাব ছাড়া ও একটি কেন্দ্রীয় কম্পিউটার ল্যাব রয়েছে। রসায়ন বিভাগের সামনে সুশোভিত পুষ্পোদ্যানটি এ কলেজের নান্দনিক সৌন্দর্যের উৎস। কিন্তু এ বাগানটি নির্মাণে সবচেয়ে বেশি শ্রম দিয়ে ছিলেন যিনি, যিনি ছিলেন এই মালঞ্চের প্রধান মালাকর, এই পুষ্পোদ্যানের প্রতিটি ফুল-বৃক্ষ ও পাতার যাঁর স্নেহ কোমল স্পর্শ জড়িয়ে আছে তিনি আজ মাটি ও মহাকালের অংশ। তিনি আর কেউ নন, আমাদের শ্রদ্ধাভাজন সবার প্রিয় সর্বজন মান্য রসায়ন বিভাগের প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান আব্দুস সামাদ স্যার।
প্রতিষ্ঠা
উত্তর জনপদের ঐতিহ্যমন্ডিত শিক্ষায়তন কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ। দুধকুমার, তিস্তা, ধরলা-বিধৌত এ অঞ্চলের মানুষের মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেয়ার ঐকান্তিক আকাঙ্ক্ষা থেকেই ১৯৬১ সালে স্থাপিত হয় এ প্রতিষ্ঠানটি। এই কলেজটির জন্ম ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে আছে বহু ত্যাগী শিক্ষাব্রতী মানুষের নাম। তাদের সবার তথ্য আজ আর উদ্ধারযোগ্য নয়। কোনো কোনো ঘটনা হারিয়ে গেছে বিস্মৃতির আড়ালে, কারো কারো অবদান ঢাকা পড়ে গেছে কালের ধুলিমলিন গর্ভে। তদানিন্তন মককুমা প্রশাসক সলিমউদ্দিন আহমেদ (ইপিসিএস) এর সার্বিক সহযোগিতায় ১৯৬১ সালে গড়ে উঠে এ কলেজ। এ ছাড়াও প্রতিষ্ঠানটি গড়ে ওঠার পেছনে যাঁদের অবদান স্মরণ করতে হয় তারা হলেন প্রাক্তন মন্ত্রী ও জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার জনাব রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ ভোলা মিয়া, আহমদ আলী বকসী, এ্যাডভোকেট আমানউল্লাহ প্রমুখ। মানবিক ও কমার্স বিভাগ নিয়ে তখনকার কুড়িগ্রাম হাই স্কুলে শুরু হয় কুড়িগ্রাম কলেজের যাত্রা। এ সময়ে কলেজের প্রশাসনিক কাজ দেখা শুনা করতেন বাবু প্রানবল্ভব করঞ্জাই। হাইস্কুলের শিক্ষক ক্ষীতিন্দ্রনাথ রায় খন্ডকালিন শিক্ষক হিসেবে ইংরেজি বিষয়ের ক্লাস নিতেন। স্কুলভবনে তিন-চার মাস কাটানোর পর বর্তমান জায়গায় কলেজটি স্থাপিত হয়।